ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়া একটি ভিডিওর সূত্র ধরে খোঁজ চালিয়ে রাতের আঁধারেই আমেনা বেগম নামে এক বৃদ্ধার হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সহায়তা তুলে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোক্তার হোসেন। পাশাপাশি বিধবা ও সন্তানহীন ওই নারীর কোনো থাকার জায়গা না থাকায় তাকে ভাতার পাশাপাশি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ইউএনও। যদিও ওই নারীর এ অব্দি জন্ম নিবন্ধন বা এনআইডি কার্ড কিছুই হয়নি। তাই জন্ম নিবন্ধন বা এনআইডি কার্ডের নিবন্ধন হলেই তার জন্য ঘর ও ভাতার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আর এ দু’টি কাজ করতে ওই বৃদ্ধাকে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও নিজেই। এ কাজের মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের চাড়াখালী গ্রামের মৃত আর্শাব আলী গাজীর স্ত্রী আমেনা বেগম। কয়েকবছর আগে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। তবে তার কোনো সন্তান না থাকায় স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়ে তিনি। বৃদ্ধা বয়সে তাকে দু’মুঠো খাবার জুগিয়ে দেওয়ার কেউ না থাকায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যেটুকু খাবার পান তা খাচ্ছেন। তবে রমজানে সবকয়টি রোজাই রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. নাঈম হাসান ইমনের। তিনি ওই নারীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তার কিছু সমস্যার কথা ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলেও ধরেন। এরপর অনেকেই কমেন্টে ওই নারীর সাহয্যে এগিয়ে আসার কথা জানান। তবে ইউএনও মোক্তার হোসেন সরাসরি নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং রাতেই ওই নারীর হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্য সহায়তা তুলে দেন। নাঈম জানান, পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা করেন। আমেনা বেগম নামে ওই নারী প্রায়ই ছোট কৈবর্তখালীতে তাদের বাড়িতে যান এবং এখনও আছেন। গত বছরও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সাহায্য পাইয়ে দেওয়ায় সহযোগিতা করেছেন তিনি। নাঈম জানান, বয়সের ভারে ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না আমেনা বেগম। কেঁপে কেঁপে কথা বলেন। নিজের বয়স ঠিকভাবে বলতে না পারলেও তার ছোট ভাইয়ের বয়স সত্তরের ওপরে। স্বামীর মৃত্যুর পর বেশি অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। স্বামীর বাড়ি চাড়াখালীতে খুবই সামান্য জায়গা ছিল, যা বিক্রি করে ভাই ও ভাইয়ের ছেলে চলে আসতে বলেন তাদের কাছে। কিন্তু তারাও এখন তাকে দেখেন না। তিনি জানান, জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় কোনো ভাতা পান না আমেনা বেগম। এ নিয়ে স্থানীয় মেম্বারের সঙ্গেও কথা বলেন। তবে এরমধ্যেই ওই নারীর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্থানীয়রা তার বক্তব্য তুলে ধরার জন্য বলেন। আর সেখান থেকেই ওই নারীর কথা ফেসবুক লাইভে তুলে ধরা হয়েছে। আর তারপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই নারীর কাছে খাদ্য সহায়তা নিয়ে আসেন এবং ঘর ও ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মোক্তার হোসেন বলেন, গত সোমবার (১০ মে) ইফতারির পর বিশ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতিকালে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে আমেনা বেগমের বিষয়টি চোখে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেই এবং যারা ফেসবুকে বিষয়টি তুলে ধরেছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমেনা বেগমের কাছে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে খাদ্য সহায়তা তুলে দেই তার হাতে। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি সে অনেকটাই অসহায়। তার কোনো জায়গা জমি নেই এবং কোনো ভাতাও পান না। এরপর এনআইডি’র কপি চাইলে তিনি জানান, কোনো জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ড নেই তার। তাই তাকে আজ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আমাকে জানানোর জন্য বলেছি। আমি তার জন্ম নিবন্ধন প্রসেস করার জন্য বলে দেব। তিনি বলেন, এগুলো পাওয়ার পরেই তাকে ভাতা ও ঘর দেওয়ার বিষয়ে আগানো যাবে। আমি চেষ্টা করবো কৈবর্তখালীর কাছাকাছি কোনো প্রজেক্টে তাকে ঘর পাইয়ে দিতে। এদিকে খাদ্য সহায়তা চাইতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়ার পাশাপাশি ঘর ও ভাতা পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বেশ খুশি হয়েছেন আমেনা বেগম। স্থানীয়রা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, মোক্তার হোসেন সম্প্রতি রাতের আঁধারে অসহায়দের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী রাকিবকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন।
Leave a Reply